Popular Post

Archive for May 2016

গুরাবা

By : Maruf Al Berunee
রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “ইসলামের শুরু হয়েছে এক গারীব [অপরিচিত/আজব/আত্মীয়-বান্ধবহীন] বিষয় হিসেবে। এটা আবার ফিরে যাবে সে গারীব অবস্থায়। আর সে সময়ের গুরাবাদের জন্য সুসংবাদ।” বলা হলো, “হে আল্লাহ্‌র রসূল (সঃ), কারা গুরাবা?” তিনি (সঃ) বললেন, “যারা অপরিচিত/বান্ধবহীন অবস্থায় যখন লোকেরা ইসলামের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সে সময় এর সংশোধন করবে।” [মুসনাদ আহমদ, মুসলিম, ইবন মাজাহ্‌] 

নষ্ট স্রোতের সয়লাভে যখন দীনের মাঝে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তখন এই গুরাবারা স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্যের ঝাণ্ডা উঁচুতে তুলে ধরে রাখে। নষ্ট স্রোত এমনই প্রভাবশালী যে মানুষ তাকেই মনে করে মূলধারা। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, “তোমাদের কি হবে যখন ফিতনা (বিপর্যয়) তোমাদের ঘিরে ধরবে – এমনকি ফিতনার মাঝেই তোমাদের বড়রা বৃদ্ধ হবে, ছোটরা বড় হবে এবং লোকেরা এই ফিতনাগুলোকে মনে করবে সুন্নাহ্‌। আর যখন ফিতনাগুলোকে পরিবর্তন করা হবে তখন লোকেরা বলবে সুন্নাতকে পরিবর্তন করা হলো‏।” [সুনান আদ-দারিমী] নস্টস্রোতের ধারক-বাহকগণ তাদের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি দিয়ে সত্যকে ধুমায়িত করে রাখে। মানুষ তখন মনে করতে থাকে ওটাই মূলধারা। আর যারা সত্যের অনুসারী তারা হয়ে পড়ে আশ্চর্য প্রজাতির। তাদের আচরণগুলোকেই মনে হয় ডিভিয়েন্ট। 

এরা যখন হকের দিকে দাও‘আত দেন তখন বিপর্যয় পন্থীরা বলতে থেকে এগুলোতো নতুন কথা। আমরা আমাদের পূর্বপুরূষদের এরকম বলতে শুনিনি। তারা দীন হিসেবে পালন করে নিজেদের বাপ-দাদার রসম-রেওয়াজ়কে। একে তারা ছাড়তে চায়না। আল্লাহ্‌ [সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা] বলেন (তর্জমা), “তাদেরকে যখন এই বলে আহ্বান করা হয় যে, ‘এসো আল্লাহ্‌ যা নাজ়িল করেছেন সেদিকে এবং রসূলের দিকে’, তারা বলে ‘আমাদের জন্য তা-ই যথেষ্ট যা আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে পেয়েছি’ যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতনা এবং সত্‌পথ প্রাপ্তও ছিলোনা।” [কুরআন, ৫/১০৪] 

কিন্তু হকপন্থী গুরাবারা নষ্ট স্রোতের সাথে চলতে অভ্যস্থ নন। তারা স্রোতের গতিকে ঘুরিয়ে দিতে চান তার সোজা সরল পথে। এদেরই একজন সেজন্য বলেছিলেন, “এ বিধান [ইসলাম] ভীরু কাপুরূষের জন্য অবতীর্ণ হয়নি; নফসের দাস ও দুনিয়ার গোলামদের জন্য নাজ়িল হয়নি; বাতাসের বেগে উড়ে চলা খড়-কুটো, পানির স্রোতে ভেসে চলা কীট-পতঙ্গ এবং প্রতি রঙ্গে রঙ্গীন হওয়া রঙ্গীনদের জন্য একে অবতীর্ণ করা হয়নি। এ এমন দুঃসাহসী নর-শার্দুলদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে যারা বাতাসের গতি বদলে দেবার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে; যারা নদীর তরঙ্গের সাথে লড়তে এবং তার স্রোতধারা ঘুরিয়ে দেবার মতো সত্‌সাহস রাখে। যারা খোদার রঙকে দুনিয়ার সব রঙের চাইতে বেশী ভালবাসে এবং সে রঙ্গেই যারা গোটা দুনিয়াকে রাঙ্গিয়ে তুলবার দৃঢ় আগ্রহ পোষণ করে। যে ব্যক্তি মুসলমান তাকে নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়ার জন্য পয়দা করা হয়নি। তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হলো জীবন নদীকে তার ঈমান ও প্রত্যয় নির্দেশিত সোজা ও সরল পথে চালিত করা। যদি সেই সোজা পথ থেকে নদী তার স্রোত ফিরিয়ে নেয়, আর সেই পরিবর্তিত স্রোতধারায়ই কেউ ভেসে চলতে সম্মত হয়, তো এমন ব্যক্তির ইসলামের দাবী একেবারেই মিথ্যা। বস্তুত যে ব্যক্তি সাচ্চা মুসলমান, সে এই ভ্রান্তমূখী স্রোতের সাথে লড়াই করবে, তার গতি ঘুরিয়ে দেবার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবে – সাফল্য ও ব্যর্থতার কোন পরোয়াই সে করবেনা। এ লড়াইয়ের যে কোন সম্ভাব্য ক্ষতিই সে বরণ করে নেবে। এমনকি নদীর স্রোতের সাথে লড়াই করতে করতে তার বাহু যদি ভেঙ্গেও যায়, কিংবা শক্তি শিথিল হয়ে পড়ে এবং পানির তরঙ্গাঘাত তাকে আধমরা করে কোন তীরের দিকে ছুঁড়ে ফেলেও দেয়, তবুও তার আত্মা কখনো পরাজয় বরণ করবেনা। তার হৃদয়ে এই বাহ্যিক ব্যর্থতার জন্য এক মুহুর্তের তরেও কোন অনুতাপ জাগবেনা, কিংবা নদীর স্রোতে ভেসে চলা কাফির ও মুনাফিকদের সাফল্যের জন্য ঈর্ষার ভাবধারা প্রশ্রয় পাবেনা।” [সাইয়েদ আবুল ‘আলা আল-মওদূদী, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব (৫ম সংস্করণ, ১৯৯৩), পৃঃ ২০৩-২০৪, শতদল প্রকাশনী, ঢাকা।] 

মানবেতিহাসের সর্বপর্যায়ে এ গুরাবারা সক্রিয় ছিলেন। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রামে কখনো পিছপা হননি এরা, যদিও বাহ্যিকভাবে এদের অনেককেই অসত্যের সৈনিকরা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, কিন্তু তাদের আত্মা কখনো পরাজয় বরণ করেনি। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার কিতাবে এদের সম্পর্কে বলেছেন, “এমন কত নবী ছিলেন যাদের সাথী হয়ে অসংখ্য আল্লাহগত প্রাণ [অসত্যের বিরুদ্ধে] লড়াই করেছেন। আল্লাহ্‌র পথে যে মুসীবতের মুখোমুখি তাঁরা হয়েছিলেন তা তাঁদের ভগ্নহৃদয় করতে পারেনি, তাঁদেরকে দমিয়ে দেয়া যায়নি, আর তাঁরা তাঁদের সংগ্রাম ছেড়েও দেননি। আর আল্লাহ্‌তো তাদেরকে ভালবাসেন যারা তার পথে দৃঢ় ও অবিচল থাকেন। তাঁরাতো শুধু বলেছেনঃ আমাদের প্রভূ আমাদের গুনাহগুলো মাফ করো আর আমাদের আচরণের বাড়াবাড়িগুলোও; আমাদের কদমগুলোকে মজবুত করে দাও, আর সত্য অস্বীকারকারীদের মুকাবিলায় আমাদের তুমি সাহায্য করো।” [কুরআন, ৩/১৪৬-১৪৭] 



সমাজের সাথে মানিয়ে চলা ...... 
(গুরাবা)

জাহেলিয়্যাত এবং পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত একটা সমাজে কোন মানুষ যখন বুঝতে পারে তার একদিন মরতে হবে, বিচারের মাঠে প্রত্যেকটা বাজে কথা, কুদৃষ্টি আর গীবতের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে - তখন সে আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হতে থাকে। 

তার আচার আচরনে পরিবর্তন আসে, সে বন্ধুদের সাথে সব আলোচনায় বসতে পারে না, কাজিনদের সাথে সব পার্টিতে অ্যাটেন্ড করতে পারে না। তাই বলে সে পারফেক্ট না, তার ভুল আছে, সীমাবদ্ধতা আছে।

কিন্তু তখন সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ। তারা সাহায্য তো দূরে থাক, বরং নানা ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে বাঁধা দেয়।

ছেলে দাঁড়ি রাখতে চাইলে তখন তাকে বলা হয় - দাঁড়িই কি সব? আরো তো কত খারাপ কাজ করিস?

মেয়ে হিজাব পড়তে চাইলে বলা হয় - কেন তুই কি এখন খারাপ আছিস? আমরা কি সব নষ্ট মেয়ে? মনের পর্দাই প্রকৃত পর্দা।

বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডাতে যোগ না দিলে, লজ্জা পেলে - তাকে অতীত নিয়ে খোটা দেয়া হয়। বলা হয় - খুব হুজুর হইছো না? এই তোমরাই তলে তলে সবচেয়ে বড় শয়তান।

কাজিনদের সাথে আড্ডা মারা অপছন্দ করলে, গায়ে হলুদ, বিয়েতে নাচানাচি, ঢলাঢলি পছন্দ না করলে --- তাকে তখন সামাজিকতার কথা বলা হয়, মানিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়।

সামাজিক সবকিছুতে তাকে মানিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু তার জন্য কেউ মানিয়ে নেয় না।

কেউ তার জন্য লাউড স্পিকারে মিউজিক শোনা বন্ধ করবে না। এটা বুঝেও যে - এটা হারাম কাজ আর ইসলাম প্রাকটিস করতে চাওয়া একটা মানুষের জন্য এটা কষ্টকর।

বন্ধুরা তার সামনে সিগারেট খাওয়া কিংবা ছেলেমেয়ে নিয়ে বাজে কথা বলা বন্ধ করবে না। ইচ্ছা করেই হয়তো আরো বেশি করবে।

সে যদি তখন রিঅ্যাক্ট করে, তখন সেটা হবে অহংকার। সে যদি তখন লজ্জাতে চুপ করে থাকে, তবে সেটা হবে দুর্বলতা।

এই সমাজটা ধীরে ধীরে তার কাছে বিষময় হয়ে যায়। মানুষের সাথে মুখে হাসি নিয়ে কথা বলা ছেলেটা আস্তে আস্তে অসামাজিক হয়ে যায়।

একটা মানসিক দ্বন্দের মাঝে বসবাস করা ছেলেটা একসময় তার পরিচয় খুঁজে পায়। তার পরিচয় সে অপরিচিত, সে ভিন্ন।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
" ইসলামের শুরু হয়েছে যখন তা ছিল গারীব (আগন্তুক, অচেনা, অদ্ভুত, অপরিচিত) অবস্থায়।। এটা আবার ফিরে যাবে সে গারীব অবস্থায়। আর সুসংবাদ হচ্ছে গুরাবাদের (অচেনা, অদ্ভুত, অপরিচিতদের) জন্য।" [মুসলিম]

গুরাবাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মত কোন স্যাক্রিফাইস এখনও আমরা করি নাই, এখনো হয়তো যেদিকে স্রোত সেদিকেই আমাদের ঝোঁক বেশি। তবুও আল্লাহর কাছে দুয়া করি আল্লাহ তা'আলা যেন - আমাদের গুরাবাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মত তাওফিক দান করেন। আর আমাদের ভুল, ত্রুটি, সীমাবদ্ধতাকে মাফ করেন।

‪#‎গুরাবা‬
‪#‎অসামাজিক‬
‪#‎অদ্ভুত‬

স্বপ্নগুলো বড় বলে কি মুছে ফেলতে হবে?

By : Maruf Al Berunee
মানুষের সাথে মিশে নতুন করে উপলব্ধি করছি, সবার জীবনে স্বপ্ন থাকে। মুখে উচ্চারণ করি বা না করি, স্বীকার করি বা না করি, সবাই কিছু স্বপ্ন বুকে ধারণ করে রাখে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় থেকে অনেক বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকে অনেকের হৃদয়ের মাঝে। যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তারা আল্লাহ যেমনটি ভালোবাসেন তেমন করেই জীবনকে রাঙ্গাতে চান। মানুষ হিসেবে হয়ত সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়, হয়ত স্বপ্নগুলো বড়, সামর্থ্য কম -- তবু হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা স্বপ্নগুলো কেন মুছে ফেলতে হবে? যদি তা আল্লাহর অপছন্দনীয় কিছু না হয়, তাহলে তাকে মুছে ফেলার কিছু নেই। হৃদয়কে তিক্ত করারও কিছু নেই। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতাই কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে। কেবলমাত্র তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়, তার নির্দেশেই প্রতিটি ঘটনা ঘটে।
পৃথিবীর কোন মানুষের সাধ্য নেই আমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করা যদি আল্লাহ না চান। আমাদের সকল চাওয়া কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই। আল্লাহর ভান্ডার অবারিত, যা থেকে তিনি যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা বেহিসাব দান করেন। যদি আমাদের যোগ্যতা হয় তার কাছে চেয়ে নেয়ার, তবে তিনি অকল্পনীয় উপায়ে বান্দাকে দান করবেন। স্বপ্নগুলো বড়, অধরা থাকার মতন বলেই কেন ফেলে দিবে মানুষ? আমি তো কতগুলো অসাধারণ মানুষের সুন্দর কিছু স্বপ্ন নিয়ে শুনেছি, যা কেবলই কল্যাণময়। *বাস্তবতার ধাক্কা* খেয়ে কেন তারা সেগুলো ভুলে যেতে চান? তা তো উচিত নয়। যারা কেবলই আল্লাহর উপরে ভরসা করেন, তারা জানেন, চাওয়া এবং পাওয়া এর সবটুকুই আল্লাহর সাথে। যদি কিছু অপ্রাপ্তি থাকে, তাও আল্লাহ চেয়েছেন বলেই। আমরা তো বলি যে আমার সলাত, আমার সহ্য করা কষ্ট, আমার জীবন ও মৃত্যু কেবলই আল্লাহর জন্য। আর আমরা তো জানি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট।
পৃথিবীর যেসব স্কেল দেখে আমরা সফলতা/ব্যর্থতা হিসেব করি, তা নয় বরং আল্লাহর কাছে আমাদের জীবনের সফলতা আর ব্যর্থতার হিসেব তো অন্য পাল্লায় মাপা হয়। আল্লাহর কাছে চাইতে থাকা প্রতিটি দু'আ আমাদের জন্য কেবলই কল্যাণকর। যিনি আল্লাহর উপরে ভরসা করেন, তিনি তো কাজ করতে গিয়ে অসফল হলে হতাশ হয়ে যান না। তিনি জানেন, সফলতার মালিক কেবলই আল্লাহ। আর তিনি চেয়েছেন বলেই তো এই অবস্থা। স্বপ্ন মুছে ফেলার কিছু নেই বরং অধরা অনেকগুলো স্বপ্নকে বুকে ধরেও একদম সন্তুষ্টচিত্তে, প্রশান্ত হৃদয়ে এগিয়ে চলতে হয়। এ কাজটা পারেন তারাই -- যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাকেই সকল ক্ষমতার অধিকারী বলে মানেন, আল্লাহর জন্য যাদের জীবন এবং মৃত্যু। আল্লাহ আমাদেরকে এমন সুন্দর হৃদয়কে ও ঈমানকে ধারণ করার তাওফিক দান করুন যা তিনি ভালোবাসেন, আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ।

Copyright © Technology Is For Us, We Are Not For Technology!!! - - Designed by Maruf Al Berunee -