খালিহাতে আত্মরক্ষা শিখুন, আত্মবিশ্বাসী হোন এবং শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করুন।
極真
‘খিওকুশিন’ কারাতের উৎপত্তিস্থল জাপানে ১৯৬৪ সালে। ‘খিওকুশিন’ এর উচ্চারণ হবে ‘খি-ইয়োক/শিন’ যার মানে হচ্ছে “চূড়ান্ত সত্য বা বাস্তবতা”। ‘খিওকুশিন কারাতে’র প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন ‘মাস ওয়াইমা’ (মৃত) । তিনি অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী কারাতে প্রশিক্ষণ করেন এবং ফাইট করার একটি পদ্ধতি আবিস্কার করেন, যা “সব থেকে শক্তিশালী কারাতে” নামে পরিচিত।
আমি কোন ব্ল্যাক বেল্টধারী নই। কিন্তু মার্শাল আর্ট নিয়ে অনেক পড়েছি, আর এখন একজন ‘খিওকুশিন’ স্টুডেন্ট।
পাঠক, আমাকে আবার সন্ত্রাসী ভাববেননা। বিডি টুডে’তে/ সামু’তে অনেক ভিজিটর ও ব্লগার আছেন। তাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে ভেবেই লিখলাম।
শারীরিক সক্ষমতা অর্জন বলতে, জাঁ ক্লদ ভ্যানডাম বা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার হতে বলছিনা। কিন্তু কিছু ওয়ার্ম আপ এক্সারসাইজ করাটা জরুরী। নইলে হঠাৎ কোন পেশীতে টান পড়তে পারে তাছাড়া স্ট্রেচিং করা থাকলে আপনার উঁচুতে লাথি মারাও সহজ হয়। শরীর ফ্লেক্সিবল হলে দ্রুততাও অর্জন করা যায়। ব্যায়াম করলে কি কি উপকার হয় তা তো সবার জানা। আর বয়স কে একদম পাত্তা দিবেননা! মনটাই আসল।
তিন ধরনের মার্শাল আর্ট রয়েছে। Non-contact, Half contact এবং Full contact. Non-contact মার্শাল আর্ট মূলত স্পোর্টস মার্শাল আর্ট। পয়েন্টের ভিত্তিতে খেলা হয়, শরীরের নির্দিষ্ট অংশে টাচ করা যায়, কোন বডি ড্যামেজ হয় না। Half contact মার্শাল আর্ট মূলত মুভিগুলোতে দেখা যায়। আর ‘খিওকুশিন’ হচ্ছে ‘ফুল কন্টাক্ট’ কারাতে। রিয়েল টাইম ফাইট হচ্ছে Full contact মার্শাল আর্ট। এই মার্শাল আর্টের জয়ী নির্বাচন কোন পয়েন্টের ভিত্তিতে হয় না। হয় নক আউটের ভিত্তিতে। যে প্রতিযোগী শেষ পর্যন্ত সারভাইভ করতে পারে সেই জয়ী হয়।

ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য কারাতে শেখাটাও জরুরী। ছেলেরা একাই বিপদ মুকাবিলা করবে আর মেয়েরা সারাজীবন মুখ বুঝে সহ্য করে যাবে এমনটা আশা করা ভুল।
নারীর প্রতিবাদের নতুন ভাষা হবে ‘খিওকুশিন’ কারাতেঃ
আচ্ছা, আমরা কি কেউ ভুলতে পেরেছি গত পহেলা বৈশাখের দুঃসহ ঘটনা? ভোলা কি যায় সেদিন এক ভিড়ের মধ্যে মেলায় আসা মেয়েদের সম্ভ্রমহানির কথা? বিজাতীয় ভুভুজেলা বাজিয়ে কিছু পিশাচ পরিবেশ বানিয়েছিল বিভীষিকাময়।
ভুভুজেলার শব্দে মেয়েদের আর্তনাদ পৌঁছুতে পারেনি জনগণের কাছে। তাই পার পেয়ে গিয়েছিল অনেক লম্পটেরা। আশার কথা, এবার ভুভুজেলা এবং মুখোশ সরকার নিজেই নিষিদ্ধ করেছে। তবুও কি পহেলা বৈশাখের ভিড়ে মেয়েরা নিরাপদ?
বাংলাদেশের মেয়েদের প্রাত্যহিক জীবন অনিরাপত্তার বেড়াজালে বন্দী। এই অনিরাপত্তাকে একমাত্র জয় করতে পারে মেয়েদের আত্মরক্ষা শিক্ষা। কিন্তু আমাদের দেশে রিয়েল টাইম ফাইটিং শেখানোর জন্য সেরকম প্রতিষ্ঠান খুব একটা নেই। মেয়েদের জন্য তো আরও নেই।
গত পহেলা বৈশাখের পৈশাচিক ঘটনার পরপরই একজন ফাইটার চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে প্রতিহত করা যায় এই ঘটনাগুলোকে! মেয়েরা যাতে নিজেরাই ঘটনার যোগ্য প্রতিবাদ করতে পারে সেজন্য তিনি মেয়েদেরকে প্রশিক্ষণ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই শুরু হয়
KO Fight Studio এর “সেলফ ডিফেন্স” কোর্স।
মেয়েদের মার্শাল আর্ট নিয়ে পরিবারের অনেক ভুল ধারণা থাকেঃ
মার্শাল আর্ট শিখলে মেয়েদের শরীর শক্ত হয়ে যায়। কিংবা মা হতে সমস্যা হয়! ইত্যাদি। তাই অনেক বাবা মা ভাবে, কি লাভ মেয়েদের মারামারি শিখে! তার চাইতে মেয়ে রান্না শিখুক, সেলাই শিখুক প্রভৃতি! কিন্তু মেয়েদেরও মার্শাল আর্ট শেখা প্রয়োজন।
মার্শাল আর্ট শিক্ষার্থীদেরকে একটি শৃঙ্খল জীবন উপহার দেয়। আনুগত্য শেখায়, একে অপরকে সম্মান করতে উৎসাহ প্রদান করে। একজন মার্শাল আর্ট শিক্ষার্থীর স্মোক বা ড্রিঙ্ক করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অনেক কিছুই জানলেন। আর এখন নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করবেন যে, শিখবো কোথায়? প্রতিষ্ঠান কোথায়?
‘খিওকুশিন কারাতে’র রিয়েল টাইম ফাইটিং শেখানোর জন্য ঢাকায় উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে
KO Fight Studio.
সেনসেই (Sensei)
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হোসেইন।
KO Fight Studio এর ফাউন্ডার and চিফ ইন্সট্রাক্টর। Kyokushin কারাতে ব্ল্যাক বেল্ট
3rd dan পাওয়া এ লড়াকু বীর বর্তমান সময়ে সবার কাছে এক পরিচিতমুখ। প্রশিক্ষণে শেখানো তার প্রতিটি পাঞ্চ, প্রতিটি কিক শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়।
অবশ্য বংশালের ছোট্ট সেই ছেলেটির আজকের সেনসেই আবদুল্লাহ হয়ে উঠার সংগ্রামটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। এই চলার পথে ছিল সব কঠিন থেকে কঠিনতর বাঁধা। চলুন তার ব্যাক্তিগত পরিচয় জেনে নেওয়া নিই।
কিভাবে বংশালের ছেলেটি হয়ে উঠল সেনসেই
আবদুল্লাহ?
সেনসেই আবদুল্লাহর ছেলেবেলা কেটেছে পুরান ঢাকার বংশালে। ১৯৭৭ সালে ২৮শে অক্টোবর জন্ম নিয়েছেন ধানমণ্ডিতে। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। পুরান ঢাকার কাবাব, বিরিয়ানি, বিউটির লাচ্ছি এসব ঘিরেই ছিল তার ছোটবেলা।
বংশালে ছিল নিজেদের বিশাল বাড়ি। দাদা ছিলেন রাজনীতিবিদ। বাবা ব্যবসা করতেন। তৎকালীন পুরান ঢাকার ম্যারিস টিউটোরিয়াল নামক এক ইংলিশ মিডিয়ামে কেটেছে তার ছোটবেলার পড়াশুনা। এরপর ঢাকা ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ও লেভেলস এবং এ লেভেলস সম্পন্ন করেন। এ লেভেলসের পর পড়াশুনা আর চালিয়ে যাননি।
তার ফাইটিং জীবন অবশ্য শুরু হয় বেশ ছোট বয়সে। মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছেলে শুরু করেছিল মার্শাল আর্ট Training. এখনকার দিনে এটা হয়ত তেমন আশ্চর্যের কথা নয়। কিন্তু তখন সময়টা ছিল ১৯৯০ সাল। সেই বয়সে বাংলাদেশের অন্যতম খলনায়ক ইলিয়াস কোবরার কাছে Hunan কুংফু শিখেন। মায়ানমারে এই Kungfu খুবই জনপ্রিয়। এর অন্য নাম Bando। ঐ Martial সে রকম পেশাদার কিছু ছিল না।
১৯৯৩ সালে সেনসেই আবদুল্লাহ Kyokushin কারাতে শেখেন। Kyokushin হচ্ছে ফুল কন্টাক্ট Karate. এর জন্ম জাপানে। আবদুল্লাহ এই কারাতে শেখার জন্য International Karate Organization এ অংশগ্রহণ করেন। এই সংগঠনের হেডকোয়ার্টার জাপানে। এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের হেডকোয়ার্টার সিংগাপুরে। আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্রাঞ্চে ভর্তি হন।
বাংলাদেশের এই সংগঠনে তার ট্রেনিং চলে প্রায় ১৬ বছর । ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত। ২০০৯ এর পর থেকে এখনও সিংগাপুরে ট্রেনিং নিচ্ছেন বিশ্ববিখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার Peter Chong এর কাছ থেকে। যিনি কিনা এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের kyokushin এর চেয়ারম্যান!
সেনসেই হতে ব্ল্যাক বেল্টের থার্ড ‘ডান’ সম্পন্ন করতে হয়। প্রত্যেকটা ‘ডান’ মার্শাল আর্টের একেকটা ডিগ্রী। মোট ১০টা ‘ডান’ সম্পন্ন করলে সে গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে উপাধি পায়।
সেনসেই আব্দুল্লাহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্যারাতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন! ২০০৩ সালে 1st All Bangladesh Open Full Contact Karate Tournament এবং ২০০৮ সালে 2nd All Bangladesh Open Full Contact Karate Tournament এ চ্যাম্পিয়ন হন।
২০০৪ সালে কুয়েতে Liberation Tournament এ প্রতিযোগিতা করেন। এর আগে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ইরানে অংশ নেন। তাছাড়াও ফিলিপাইন এবং সিংগাপুরের All Asian Tournament এ অংশগ্রহণ করেন সেনসেই আবদুল্লাহ।
তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি যিনি পাকিস্তান এবং থাইলান্ডের Full Contact Kyokushin Karate Seminer পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিশ্বের সব বড় বড় প্রশিক্ষকের কাছ থেকে। এর মধ্যে Shihan Peter Chong, Shihan Royama, Shihan Yujo Goda, Shihan Jackie Chong, Shihan Inamullah Khan এর নাম উল্লেখ যোগ্য।

মেয়েদের প্রতি সেনসেই আবদুল্লাহর আহ্বানঃ
মেয়ে, প্রতিবাদ কর! জেনে নাও উপায়গুলো!
সত্যি কথা হচ্ছে মার্শাল আর্ট সবাই জানি না। সবাই সেলফ ডিফেন্স কোর্স করেও ফেলেনি। তাহলে আসছে বৈশাখে কিভাবে একটি মেয়ে নিরাপদ থাকতে পারে? কিংবা প্রতিদিন রাস্তায় মেয়েদের সঙ্গে হওয়া শারীরিক হয়রানির প্রতিবাদ কিভাবে মেয়েরা করতে পারে সে বিষয় কিছু টিপস দিয়েছেন আবদুল্লাহ। মেয়েদের প্রতিবাদের ভাষা কেমন হওয়া উচিত?
চলুন, টিপসগুলো দেখে নেই?
১) Awareness একটি বড় বিষয়। আপনি যদি জানতে পারেন কোন পরিস্থিতি আপনার জন্য সুবিধাজনক নয়, তাহলে সেই সিচুয়েশনে আপনি যাবেন না। গেলেও alert থাকবেন।
২) সময় অনুযায়ী স্থান এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। দিনের বেলাতেও কোন কোন জায়গা ভীষণ অনিরাপদ, সেসব জায়গা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা মঙ্গলের। এটা ছেলে মেয়ে সবার জন্যই।
৩) আপনার সিক্সথ সেন্স যদি বলে আপনি কোন একটা জায়গায় ফিজিক্যালি হ্যারাজ হতে পারেন, তাহলে দ্রুত সরে যাবেন সেই জায়গা থেকে।
৪) যদি হ্যারাজ হন, একদম সময় না নিয়ে এবং এক মুহূর্ত না ভেবে প্রতিবাদ করুন। React করুন। অত কিছু ভাবতে যাবেন না যে ভিড় বাস বলেই ধাক্কা দিল কিংবা ছেলেরা এরকম একটু করতেই পারে। এসব মাথাতেও আনবেন না।
হয়ত কেউ তাকাল, আপনি কথা শুনালেন। অনেকেই বলবে বাড়াবাড়ি করছেন। কিন্তু আপনি বুঝবেন ঐ ব্যক্তির চাহনি শোভনীয় ছিল কিনা! মোটকথা আপনি যখনই বুঝবেন আপনার privacy তে ব্যাঘাত ঘটছে তখনই আপনি প্রতিবাদ করবেন। এই প্রতিবাদটুকু পুনরায় ওদের খারাপ কাজ করতে বাধা দেবে।
৫) Physically প্রতিহত না করতে পারলেও, voice raise করুন। যাতে হয়রানকারি বিব্রত হয় এবং পিছপা হয়।
৬) মেয়েরা সঙ্গে চাবির রিংয়ের সঙ্গে লোহার চেইনের মত রাখতে পারেন। যাতে কিছু হলে ঘুরিয়ে একটা আঘাত করলেন। কিংবা সঙ্গে লাগলেন বড় সেফটি পিন, বড় ক্লিপ, নেইল ফাইলারের মত তীক্ষ্ণ জিনিস।
সেনসেই আবদুল্লাহর মতে, একজন সত্যিকারের ফাইটার কখনও চাঁদাবাজি করে না, মাস্তানি করে না। তাই সবসময়ই চাঁদাবাজ কিংবা হয়রানকারীরা প্রচণ্ড ভীতু হয়। প্রতিবাদ করে একবার এদেরকে প্রতিহত করতে পারলে দেখবেন, ধীরে ধীরে নিজের সাহসটা বেড়েই চলেছে।
বিস্তারিত জানার জন্য যোগাযোগের জন্যঃ
KO Fight Studio
Road #113/A, House #19-20, Gulshan-2, Dhaka-1212
+880 1924 999 000
N.B. some part of this article has been taken from 'bdyouth'