- Back to Home »
- হোমিওপ্যাথি »
- প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
Posted by : Maruf Al Berunee
Tuesday, November 13, 2018
প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতের হোমিওপ্যাথিক
চিকিৎসা
পক্ষাঘাত
কি ? পক্ষাঘাতের
কারন প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ
পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস (Paralysis) এক প্রকার দৈহিক বিকার,যাতে মাংশপেশী স্বাভাবিক
কাজ করার বদলে দুর্বল বা শিথিল হয়ে থাকে। এতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে পঙ্গুত্ব হতে
পারে।পক্ষাঘাত একটি বা দুটি পেশীতে হতে পারে, এক বা একাধিক অঙ্গে হতে
পারে বা পুরো শরীরে হতে পারে। অনেক সময়ই পক্ষাঘাতের সঙ্গে অবশতা অর্থাৎ স্পর্শ
অনুভুতির অভাব হতে পারে,কিন্তু সব সময় নয়।পক্ষাঘাত স্বল্পস্থায়ী হতে পারে অথবা
দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে। পক্ষাঘাত অন্য রোগের উপসর্গ অথবা একাই একটি ভয়াবহ রোগ
হিসাবে হতে পারে, আবার পক্ষাঘাত খুব মৃদু এবং স্বল্প মেয়াদী হতে পারে যা
আমরা প্রায় টেরও নায় না।দেখা গেছে গড়ে পঞ্চাশ জনের মধ্যে এক জনের অল্প বিস্তর
পক্ষাঘাত আছে। ব্যুৎপত্তিগত বাংলায় পক্ষাঘাত শব্দটি এসেছে "পক্ষ+আঘাত"
থেকে, স্ট্রোক অথবা শিরদাড়ার একদিকে আঘাত লেগে অনেক সময় শরীরের
বিপরীত অর্ধেক অবশ এবং পঙ্গু হয়ে যায়।শরীরের এক অর্ধ অর্থাৎ এক পক্ষ আঘাত গ্রস্ত
হবার থেকেই সম্ভবতঃ এই শব্দটির উৎপত্তি।ইংরেজী প্যালসি (Palsy) শব্দটি প্যারালাইসিস বা
পক্ষাঘাতের প্রায় সমার্থক কিন্তু কয়েকটি বিশেষ পক্ষাঘাতের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
যেমন বেলস
প্যালসি বা মুখে পক্ষাঘাত।
পক্ষাঘাতের কারণসমুহঃ
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্তের
কারণে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত হয়৷ বিশেকরে স্পা্ইনাল কর্ডের ক্ষতিগ্রস্তের কারণে৷
সাধারণত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মাথায় কোনো রোগ, যেমন পারকিনসন্স
অথবা মস্তিষ্কে কোনো আঘাত পেলে এমনটা হতে পারে৷ বিজ্ঞানীরা বহুদিন থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত
রোগীরা যাতে নিজেরাই অচল অঙ্গ পরিচালনা করতে পারেন সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ কিন্তু মস্তিষ্কের
সংকেত পড়তে গিয়ে তাদের বেশ হিমশিম খেতে হয়৷ কেননা মস্তিষ্কের সংকেত খুব জটিলভাবে মাংসপেশীর
কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে৷কোনো স্নায়ুর দূরতম প্রদেশে আঘাত লেগে এর প্রত্যাঘাত মেরুমজ্জা
অথবা মস্তিষ্কে উপস্থিত হয়ে পক্ষাঘাত উৎপাদন করতে পারে। একে রিপ্লেক্স কস বলে । পক্ষাঘাতের
আক্রমণ হঠাৎই হয়ে থাকে কিন্তু এই পীড়া ধীরে ধীরে উৎপন্ন হতে পারে। পক্ষাঘাতকে কোনো
একটি নির্দিষ্ট স্থানে ব্যাধি বলে বর্ণনা করা যায় না। বস্তুত, স্নায়ুমন্ডলের
ক্রিয়ার হীনতা বা ধ্বংস হতেই পক্ষাঘাত জন্মে, সুতরাং এগুলোকে সর্বাঙ্গিক এবং
স্থানিক এই দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত করা যেতে পারে।
লক্ষণসমুহ :এই পীড়া প্রথমে হাতে আরম্ভ হয় এবং সর্বপ্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুলির পেশি আক্রান্ত হয়। গ্রীবা, বাহু অথবা হাতের পেশিও প্রথমে আক্রান্ত হতে পারে। এই আক্রমণ ক্রমে সব পেশিমন্ডলীতে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। আক্ষেপ, স্পন্দন, কম্পন এবং বেদনা এর প্রধান লক্ষণ, শরীরে দুর্বলতা এবং আলস্য লক্ষিত হয়, ব্যাধি যতক্ষণ হাতে আবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত একে সাধ্য বলা যায় কিন্তু সব পেশি আক্রান্ত হলে বিশেষ আশঙ্কার সম্ভাবনা। খাদ্য গ্রহন পেশির এবং ভোকালকর্ড আক্রান্ত হলেই বিশেষ ভয়ের কথা। কিন্তু এই ব্যাধির শেষ পর্যন্ত বুদ্ধির তীহ্মতা এবং শারীরিক সুস্থতা প্রায়ই অক্ষুণ থাকতে দেখা যায়। আক্রান্ত পেশিতে ইলেকট্রিসিটির মতো স্পন্দন অনুভূত হয়। আক্রান্ত স্থান প্রথমে শীতল ওভারবোধ, তথাকার স্পর্শশক্তি হ্রাসও পিপীলিকা চলার মতো মনে হয়। সামান্য স্পন্দিত বা কম্পন হতে পরে আক্রান্ত স্থানেরক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া হ্রাস হয়ে পেশিগুলো শুষ্ক এবং স্পর্শ ও সঞ্চালন শক্তির হ্রাস হয়ে থাকে। কখনও কখনও আক্রান্ত অঙ্গাদি একেবারে অবশ হয়। সচরাচর স্থানিক ও সর্ব্বাঙ্গিক এ দু’রূপে পক্ষাঘাত দেখা যায়। স্ত্রী অপেক্ষা পুরুষের মধ্যেই এইব্যাধির প্রাচুর্য লক্ষিত হয়ে থাকে, অনেকে একে পুরুষানুক্রমিক বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন, একই পরিবারের লোকই এইব্যাধি কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারে অর্ধাঙ্গ পক্ষাঘাত: সচরাচর একদিকের হাত-পা, চর্বণ পেশি ও জিহ্বার পেশি আক্রান্ত হয়। ডান অপেক্ষা বাম অঙ্গেই সচরাচর বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গাল শিথিল হয়, মুখের কোনের ওপর দিকে উঠে যায়। জিহ্বা বের করলে তা আক্রান্ত দিকে বেঁকে যায়। কথায় জড়তা ও বোধশক্তি ব্যাহত হয়। সহজেই অবসাদ ও সামান্য কারণেই দুঃখ বা
কষ্ট ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। হাত-পা ক্রমশ শুষ্ক হতে থাকে। চিত্তবিভ্রম
ও হাত-পায়ের ও শারীরিক দুর্বলতা হতে থাকে। সেজন্য লিখতে অক্ষর ভুল করে। জিহ্বা ও ঠোঁট
কাঁপে, জিহ্বা বের হয়, কথা বলতে বলতে মধ্যে মধ্যেছেড়ে দেয়। কথা অস্পষ্ট, তোৎলামো, সর্বদা কাঁপে, শরীরের স্থানে স্থানে কম্পন,
ক্রমে চলতেও কাঁপতে
থাকে এবং পা স্থিত রাখতে পারে না। লেখার সময় হাত কাঁপে। নাড়ি দুর্বল, দ্রুত, চোখের তারা কখন সঙ্কুচিত, কোনো স্থানে বিস্তৃত থাকে ও অসম, একটা বড় একটা ছোট। অসাড়ে মলমূত্র ত্যাগ, কখন হাত-পায়ের আক্ষেপ,
কখন নিম্নাঙ্গ অবশের
কারণে কোষ্ঠবদ্ধতা, রোগী কথা বলতে অশক্ত, দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ করে। দাঁড়াতে বা চলতে অক্ষম হয়।
১. প্রথম অবস্থা : রোগ যখন শুরু হয়, তখন দেখা যায়,রোগী যেন কোনো বিষয়ে
মনস্থির করতে পারে না, মানসিকবৃত্তির গোলযোগ ঘটে।তার মনুষ্যজনোচিত
ক্রিয়াকলাপও হ্রাস পেতে থাকে।তার ফলে স্মৃতিশক্তি, বিচারক্ষমতা, বুদ্ধিবৃত্তিএমনকি নীতিজ্ঞান পর্যন্ত লোপ পায়, ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্মে,
মনে করে সে বিপুল
সম্পত্তির অধিকারী হবে।
২. দ্বিতীয় অবস্থা : এই অবস্থায় পক্ষাঘাতের লক্ষণ সব প্রকাশ পেতে
থাকে। হস্তপদের কম্পন, মুখমন্ডলের কম্পন, জিহ্বার আড়ষ্টতা,
বাক্যের জড়তা প্রভৃতি
দেখা দেয়। লিখতে হাত কাঁপে, কোনো কোনো শব্দ বা অক্ষর পড়ে যায়, কথা বললেও ওইরূপ হয়,
কতক কথা বলে, কিছু বা বাদ পড়ে যায়। মনের দুর্বলতা, সময়ে সময়ে মৃগী রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, কোনো কোনো শব্দ উচ্চারণে যেমন- প, ফ, ব,
ভ ওষ্ঠবর্ণে অসমর্থ
হয়, অনুপ্রাস বা একরূপ ব্যঞ্জনবর্ণের পুনঃপুন
বিন্যাস স্বরূপ শব্দালঙ্কার, আবৃত্তি করতে অসমর্থ
হয়, এই অবস্থাতে কোনো কোনো রোগীর কথা একেবারেই
বন্ধ হয়ে যায়।
৩. তৃতীয় অবস্থা : একে পরিণত অবস্থাও বলা যায়, রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে।অনুভব
শক্তি থাকে না, রোগী চলতে পারে না, কথাও অস্পষ্ট হয়,
মানসিক শক্তি লোপ
পায়, মৃগী বা সন্ন্যাস দেখা দিতে পারে, প্রথম অবস্থায় ভ্রান্তবিশ্বাস আরও প্রবল হয়; উন্মাদ অবস্থায় পূর্বে যাদের বুদ্ধির বিলক্ষণ দেখা যায়নি, এই অবস্থায়তাদের সম্পূর্ণ ডিমেনসিয়া (প্রোফাউন্ড মেন্টাল ইনক্যাপাসিটি)
বা বুদ্ধিহ্রাস উপস্থিত হয়। রোগী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।চিকিৎসা না হলে রোগী অবশেষে মৃত্যুমুখে
পতিত হয়।
পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন কৌশলঃ
১) একোনাইট নেপিলাস: শুষ্ক শীতল বায়ু প্রবাহে কিংবা মরুঝড়ে রক্তাধিক্যতার কারনে পক্ষাঘাত এবং আক্রান্ত স্হান ঠান্ডা অনুভুত হলে এবং আক্রান্ত স্হানে অসারতা ও ঝিন ঝিণ অনুভুত হলে সেই রোগীর জন্য দ্রুত একোনাইট নেপিলাস প্রয়োগ জরুরী। একোনাই বিফল হলে কষ্টিকাম প্রযোজ্য হবে।
২) এ্যাসকুলাস গ্লেবরাঃ পায়ের পক্ষাঘাত এবংসংকোচন ভাব বিদ্যমান থাকরে সেই রোগীর এ্যাসকুলাস গ্লেবরা প্রয়োগ দরকার।
৩) এ্যাসকুলাস হিপঃ হাতের পক্ষাঘাত হাত উঠাইতে পারে না, কোমরে দুর্বলতা ও অবশতার কারণে চলিতে না পারিলে এ্যাসকুলাস হিপ এই রোগীর জন্য খুবই উপকারী ঔষধ।
৪) এগারিকাসঃ নিম্ন-অঙ্গের পক্ষাঘাতসহ বাহুদ্বয়ের কম্প;মেরুমজ্জার
কোমলতার জন্য হাত পায়ে পক্ষাঘাত। লাম্বার প্রদেশে মেরুমজ্জার রক্তাধিক্যের কারনে
প্যারালাইসিস এবং তৎসহ প্যারালাইসিস অংগে তীব্র বেদনা। লাম্বার সেক্রাম প্রদেশে
বেদনা। বসিয়া থাকিলে বেদনা বৃদ্ধি।
হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বেদনা। একপাশের হাত অপর পাশের পা পক্ষাঘাত হইলে এগারিকাস
উপযোগী।
৫) এলুমিনাঃ
মেরু মজ্জার বিকার বশতঃ পক্ষাঘাত।পায়ের তলায়
অবসতা; রাতে
যে রোগী অন্ধকারে হাটতে পারে না; চোখ বন্ধ করিয়া হাটিতে পারে না সেই রোগীর
জন্য এলুমিনা উপযোগী।
৬) এপিস মেলঃ ডিপথেরিয়া, টাইফয়েড, মেনিঞ্জাইটিস
প্রভৃতি রোগ ভোগের পর পক্ষাঘাত; দেহের একপাশে পক্ষাঘাত; অপর
পাশে কম্প; দেহের নিচের অংশ নীল ও শীতল। এই লক্ষণ
সমষ্টিসহ এপিস মেলের ধাতুগত মিল যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে সেই রোগীর জন্য এটি
গুরুত্বপুর্ণ ঔষধ।
৭)আর্জেন্ট
নাইট্রিকামঃ গ্ল্যান্ডের উপর আঘাত বশতঃ রক্ত বা
রসস্রাব জনিত পক্ষাঘাত। ডান পাশের পক্ষঘাত;শীতল ও সিক্ত আবহাওয়ায়
বৃদ্ধি। আর্নিকা ব্যবহারে রক্তের ক্লট শোষিত হয়ে রোগ আরোগ্য হয়।
৯)আর্সেনিক এলবম:
রোগীর
পেশীসমুহ ক্রমাগত শীর্নতা অঙ্গাদির ক্রমাগত কম্প। রোগী যদি মদ্যপায়ী হয় তার জন্য
আরো উপযোগী।হাত পায়ের বেদনা, আক্রান্ত পাশে শুইতে পারে না। আক্রান্ত অঙ্গ
চালনায় আরাম।অত্যধিক দুর্বলতা ও অবসতা। ইহা সিসক বিষের প্রতিষেধক। এই রোগ লক্ষণের
সাথে আর্সেনিকের ধাতুগত মিল থাকলে আর্সেনিক এলবম অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধ।
১০)ব্যারাইটা কার্বঃ বৃদ্ধদিগের
পক্ষাঘাত; বালকের
ন্যায় ব্যবহার করে, কিছু মনে রাখতে পারে না। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বর্ধন হয় না, মাথার
খুলি আংশিক ভাবে উন্মুক্ত থাকে এবং লালা নির্গত হয়।মস্তিষ্ক ও মেরু মজ্জা দুর্বল। হাত
পায়ের কম্প।মুখে পক্ষাঘাত রোগীর জন্য ব্যারাইটা কার্ব উপযোগী।
১১) বেলেডোনাঃ এপোপ্লেক্সি,মস্তিষ্কের
রক্তাধিক্য। দেহের এক পাশে কম্প। মুখের পক্ষাঘাত। লোকোমোটর এটাক্সিয়া রোগীর জন্য
বেলেডোনা উপযোগী।
১২)ক্যালকেরিয়া
কার্বঃ বার বার পানিতে ভেজা; অতিরিক্ত
স্ত্রীসহবাস ইত্যাদি কারনে পক্ষাঘাতের ন্যায় দুর্বল। শিশুদের পক্ষাঘাতসহ
ক্যালকেরিয়ার ধাতুর রোগীর পক্ষাঘাতে জন্য উপযোগী।
১৩)ক্যানাবিস ইন্ডিকাঃ
পক্ষাঘাতে
আক্রান্ত অঙ্গ ঝিন ঝিন ভাব; দুই পা ও ডান হাতের কম্প। মানসিক বিভ্রম;খা ওয়ার
পরেই বলে সে অনেক সময় হলো আহার করে নাই। স্হান ও সময় নিয়ে ভুল ধারনা। পিঠে বেদনা, বসিয়া
থাকিলে বাড়ে এই লক্ষণ সমষ্টিতে ক্যানাবিস ইন্ডিকা উযোগী।
১৪) কষ্টিকামঃ
শুষ্ক
ও শীতল বায়ুতে একক স্নায়ুর পক্ষাঘাত।চোখের পাতা, জিহ্বা, ঠোটের
পক্ষাঘাত; খাইতে
ও কথা বলিতে অক্ষম।আক্রান্ত অঙ্গে বেদনা। স্পর্শ অনুভুতি ক্ষমতা ঠিক থাকে। রোগীর পক্ষাঘাত আস্তে
আস্তে বাড়ে; স্মৃতি শক্তি কমিয়া যায়। একোনাইট নেপিলাস
প্রয়োগের পরে কষ্টিকামের প্রয়োজন হয়।
১৫) চায়নাঃ
যে
রোগীর অত্যধিক রক্ত ও শুক্রক্ষয়ের কারণে পক্ষাঘাত হয় তার জন্য চায়না উপযোগী।
১৬) কোকুলাস ইন্ডিকাঃ
মুখ
কন্ঠ জিহ্বায় পক্ষাঘাত; প্যারাপ্লেক্সিজিয়া, উরুদন্ডে
অবসাদ ও বেদনা বোধ এ জন্য চলিতে পারে না। দুই পায়ের অবসতা, দুই
হাতের অবসতা,মাথার পিছনে পেশীসমুহের পক্ষাঘাতেরমত দুর্বল ও
বেদনা। অতিরিক্ত স্রী সহবাসের কারনে পক্ষাঘাত। মাথাঘোরা, দুর্বলতা, মুর্ছার
ভাব থাকিলে কোকুলাস ইন্ডিকা উপযোগী।
১৭)কোনিয়াম
মেকুলেটামঃ পক্ষাঘা্ত নিচ থেকে শুরু হয়ে উপরের দিকে
পরিচালিত হলে সুষুমা শীর্ষ বা মেডেলা আক্রান্ত হলে কোনিয়াম উপযোগী।বৃদ্ধ ও
বৃদ্ধাগনের পক্ষাঘাতে উপযোগী। মেরুদন্ডে পক্ষাঘাত অথবা ডিপথেরিয়ার পরে পক্ষাঘাত
হলে মাথায় অসারতা অনুভব ও মাথা ঘুরানোর ইতিহাস যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে সেই রোগীর
জন্য কেনিয়াম মেকুলেটাম উপযোগী।
১৮) কুপ্রম মেটঃ
নিম্ন
অঙ্গে পক্ষাঘাত শুরু হয়ে উপরের দিকে ধাবিত হয়। খিচুনির পরে পক্ষাঘাত বুকে
রক্তাধিক্যতা, প্রবল হৃৎস্পন্দন, নাড়ী
ধীর, ক্ষুদ্র
ও ক্ষীণ, চক্ষু
মুদ্রিত থাকে।তাকাইলে চক্ষুগোলক ঘুরিতে থাকে। রোগীর অনুভুতি ঠিক থাকে। সেই রোগীর
জন্য কুপ্রম মেট উপযোগী।
১৯)ডালকামারাঃ
ঠান্ডা
ও স্যাতস্যাতে আবহাওয়ায়, আবহাওয়া পরিবর্তনের পরিবেশে বসবাসের
কারণে মেরুমজ্জা বা স্পাইনাল কর্ড এ রক্তাধিক্যের কারণে জিহ্বার আরষ্টতা বোধ ও
পক্ষাঘাত কথা বলিতে পারে না। মুত্রস্হলীর পক্ষাঘাত, দুর্গ্ধ ও অত্যাধিক
স্লেষ্মাম মুত্র। হাতে
ও পক্ষাঘাত অঙ্গে শীতল অনুভব হলে সেই রোগীর জন্য ডল্কামারা উপযোগী। ডাল্কামারার
পরে রাসটক্স প্রয়োজনীয় ঔষধ।
২০)জেলসিমিয়ামঃ যে পক্ষাঘাত রোগীর অনুভতি থাকে ও অনুভুতির প্রবলতা বৃদ্ধি পায় সেউ রোগীর
জন্য জেলসিমিয়াম উপযোগী।শিশুদিগের পক্ষাঘাত, সমগ্র পেশী গুলির পক্ষাঘাত; হাত
ও পায়ের অবশতা ও ভারী বোধ।ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় না।। চোখের পাতা উঠানো
যায় না।কথা বলায় জড়তা আসে।কোন খাদ্য গিলিতে কষ্ট হয়।পায়ের পক্ষাঘাতের কারনে হাটতে
টালমাতাল অবস্হা
হয়।হাত নড়াচড়া করতে নড়তে
থাকে।লোকোমোটর এটাক্সির তীব্রতার সাথে বেদনা থাকে। ডিপথেরিয়ার পরে পক্ষাঘাত হলে
জেলসিমিয়াম উপযোগী ঔষধ।
২১)হিপার সাল্ফঃ
পারদ বিষ জনিত কারনে পক্ষাঘাত হলে সেই রোগীর জন্য হিপার সাল্ফ উপযোগী
ঔষধ।
২২)হায়োসিয়ামাসঃ
প্লাজম হবার পর প্যারালাইসিস এজিট্যান্স।বাহু ও হাতের কম্প।হাত ও পা শীতল।হাতের
আঙ্গল গুলি ছোট মনে হয়। অসারে মলমুত্র ত্যাগ করে।এই লক্ষণ সমষ্টি যে রোগীতে
বিদ্যমান তার জন্য হায়োসিয়ামাস উপয়োগী।
২৩)ইগনেসিয়াঃ মানসিক
উত্তেজনা বশতঃ পক্ষাঘাত,অতিরিক্ত
রাত্রী জাগরনের কারনে নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত; হিষ্টিরিয়া জনিত পক্ষাঘাত হলে ইগনেসিয়া উপযোগী ঔষধ।
২৪)ল্যাথাইরাসঃ
নিম্নাঙ্গের গতি শক্তির পক্ষাঘাত; স্পর্শ
অনুভুতি ঠিক থাকে অথবা বৃদ্ধি পায়।হাটা চলায় টলটলায়মান গতি। এই পক্ষাঘাত রোগীর জন্য
ল্যাথাইরাস উপযোগী।
২৫)লিডাম পালঃ
পা হইতে উপরের দিকে ধাবমান পক্ষাঘাতে লিডাম পাল উপযোগী।
২৬)ম্যাগনেসিয়া ফসঃ প্যারালাইসিস এজিট্যান্স,হাত পা এমনকি মাথাও কম্প হতে থাকলে ম্যাগনেসিয়া ফস উপযোগী।
২৭)ম্যাঙ্গানামঃ
নিম্ন অঙ্গ হতে পক্ষাঘাত শুরু হয়; দেহ টলমল
করে হাটিতে চেষ্টা করিলে দৌড়াইয়া অগ্রসর হয়। হাড়ে বেদনা বোধ করে এই লক্ষণ সমষ্টি
যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তার জন্য ম্যাঙ্গানাম উপযোগী।
২৮)মার্ক সলঃ
যে রোগীর পক্ষাঘাত হাত হতে শুরু হয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়
সেই রোগীর জন্য মার্ক সল প্রয়োজন। রোগীর পাদ্বয় আরষ্টতা দেখা দেয় রোগী নিজে পা
নড়াতে না পারলেও অন্যে নড়াইতে পারে। স্পাইনাল মেনিনজাইটিসের পরে পক্ষাঘাত হলে
মার্ক সল উপযোগী ঔষধ। যে রোগীর উপরোক্ত লক্ষণ সহ মানসিক ও শারিরীক অবসন্নতা
বিদ্যমান তার জন্য মার্কসল উপযোগী ঔষধ।
২৯)নেট্রাম মিউরঃ
ম্যালেরিয়া জ্বর,ডিপথেরিয়া,অতিরিক্ত
স্ত্রী সম্ভোগের কারনে পক্ষাঘাত; অত্যধিক
মানসিক অবসাদ, আবেগ, উত্তেজনা বশতঃ পক্ষাঘাত, নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত। রোগীর মেরুদন্ডে স্পর্শ সহ্যহীন বেদনা। রোগী যদি শক্ত
বিছানায় আরাম বোধ করে তবে ন্যাট্রাম মিউর উপযোগী ঔষধ।
৩০)নাক্স ভমিকাঃ এপোপ্লেক্সিজিয়া,ডিপথেরিয়া,অতিরিক্ত
মদ্যপান,স্ত্রীসঙ্গম অথবা আর্সেনিক বিষজনিত নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত।
যে রোগী অলস তার জন্য নাক্স ভুমিকা উপযোগী।পক্ষাঘাত গ্রস্হ অঙ্গ শীতল অসাড় ও
শীর্ণ।অসম্পুর্ন পক্ষাঘাত গতি শক্তি সমপুর্ণ শেষ হয় না।কিন্তু আক্রান্ত অঙ্গ
নড়াইতে গেলে কম্প শুরু হয়।হাটার সময় পা টানিয়া নিতে হয়।পা উঠাইতে পারে
না।মদ্যপায়ীদের হাতের কম্পসহ পক্ষাঘাত রোগীর জন্য নাক্স ভুমিকা উপযোগী ঔষধ।
৩১)ওপিয়ামঃ
এপোপ্লেক্সির পর পক্ষাঘাতসহ স্পর্শ অনুভুতি লোপ। বৃদ্ধ ও মদ্যপায়ী দের পক্ষাঘাত;যে রোগী নাক
ডাকে ও চক্ষু অর্ধেক খোলা রাখে সেই রোগীর জন্য ওপিয়াম উপযোগী।
৩২)এসিড অক্জালিকঃ
মেরুমজ্জার ও মেরুদন্ডের নিচের দিকে তীব্র বেদনা, নিচের দিকে ধাবিত হয়। রোগীর শ্বাসকষ্টসহ আরষ্টতা বিদ্যমান
থাকলে উপযোগী।
৩৩)ফসফরাসঃ
মস্তিষ্ক ক্ষয়,স্পাইনাল হাইপারট্রফিক প্যারালাইসিস। অতিরিক্ত স্ত্রী সঙ্গম, টাইফয়েড জ্বরবশতঃ সন্তান প্রসবের পরে পক্ষাঘাত। প্রায়ই
মেরুদন্ডে অসহ্য বেদনা। আক্রান্ত পেশীসমুহের সংকোচন।আক্রান্ত অঙ্গের অত্যধিক
উত্তাপ বোধ কিন্তু স্পর্শ অনুভুতি লোপ পায়।
৩৪)ফাইজোষ্টিগমাঃ প্যারালাইসিস এজিট্যান্স।বুদ্ধিবৃত্তি অটুট থাকে।খাল ধরার
ন্যায় বেদনা থাকে। ঘুমের মাঝে হাত পা কাপিয়া উঠে।যে পক্ষাঘাত রোগীর মাথার পিছন দিক
হতে মেরুদন্ড বাহিয়া পা পর্যন্ত ছড়াইয়া যায়,রোগী অবসতা ও দুর্বলা বোধ করলে ফাইজোষ্টিগমা উপযোগী ঔষধ।
৩৫)প্লামবাম মেটঃ
প্রগ্রেসিভ মাসকিউলার এট্রফি। আক্রান্ত স্হানে বেদনা এবং
তৎসহ পাকাশয়ের বেদনা পর্যায়ক্রমে আসে। আক্রান্ত হওয়ার আগে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কম্প
শুরু হয়। ডান অঙ্গের হেমিপ্রেক্সিজিয়া। জিহ্বা,স্বরযন্ত্র,ও হাতের কব্জির পক্ষাঘাত। আক্রান্ত অঙ্গ শীর্ণ হয়। হাত ও পা
শীতল বোধ হয়। ঘর্ম কখনও হয়না ও দুর্দমনীয় কোষ্টবদ্ধতা যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে
তার জন্য প্লাম্বাম মেট উপযোগী।
৩৬)রাসটক্সঃ অতিরিক্ত পরিশ্রম,জ্বলে ভেজা, স্যাতসেতে স্হানে শয়ন অথবা টাইফয়েড জ্বর জনিত কারনে
পক্ষাঘাত হলে রাসটক্স উপযোগী। শিশুদিগের স্পাইনাল প্যারালাইসিস, হাত পা ও কোমরে অত্যন্ত বেদনা। কঠিন বিছানায় শয়নে উপশম। আদ্র ওশীতলতার জন্য মুখমন্ডলে পক্ষাঘাত।
কোন কিছু খাইতে অক্ষমতা। এই ঔষধের পরে ক্যালকেরিয়া কার্ব, কষ্টিকাম,সালফার
উপযোগী।
৩৭)রুটাঃ ঠান্ডা লাগিয়া মুখে পক্ষাঘাত বা বেলস প্যারালাইসিস। হাতের
আঙ্গুল তথা বৃদ্ধাঙ্গুলির পক্ষাঘাত।রোগী চলিতে গেলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বেদনা হলে সেই
রোগীর জন্য রুটা উপযোগী।
৩৮)সিকেলি করঃ
কোন রোগীর কম্প ও
এপোপ্লেক্সি পরে পক্ষাঘাত হলে এবং আক্রান্ত স্হান দ্রুত শীর্ণ হলে সিকেলি কর
প্রয়োজ ন।মেরুদন্ডে বিশেষ করে সেক্রাম প্রদেশে তীব্র বেদনা। সম্পুর্ণ পক্ষাঘাতসহ
অসারে মলমুত্রত্যাগ করলে সিকেলি কর উপযুক্ত ঔষধ।
৩৯)সাইলেসিয়াঃ
কম্পের পর পক্ষাঘাত; খাদ্য গিলিতে অক্ষমতা। বাম হাতের পক্ষাঘাতসহ শীর্ণতা। আক্রান্ত
হাতের আঙ্গল গুলোর অসারতা। দুই পায়ের পক্ষাঘাতসহ মাথার ভার বোধ। ঘার্ম বন্ধের পরে
পক্ষাঘাত;স্নায়ুসমুহের পুষ্টির অভাবে পক্ষাঘাত। শিশু হাটিতে বিলম্ব
হয়, মেরুদন্ডে টিউমার, ঠান্ডা সহ্য হয় না; অত্যধিক কোষ্ঠবদ্ধতা সেই শিশুর পক্ষাঘাত চিকিৎসায়
সাইলেসিয়া উপযোগী ঔষধ।
৪০)ষ্ট্যানাম মেটঃ
হস্তমৈথুন বা মানসিক আবেগ বশতঃপক্ষাঘাত; বাম পাশে পক্ষাঘাত; ক্রিমি বা আক্ষেপ জনিত পক্ষাঘাত; পক্ষাঘাতগ্রন্হ বাহু ও সেই পাশের বুকে ভার বোধ। আক্রান্ত
অঙ্গ সর্বদা ঘর্মাক্ত ও নিশা ঘর্ম হলে সেই রোগীর জন্য স্ট্যানাম মেট উপযোগী।
৪১)ষ্ট্যামোনিয়ামঃ
সার্ভাইক্যাল ও ডর্সাল ভার্টিব্রার মধ্যে সর্বদা বেদনা ও
ভার বোধ। হাত
দ্বারা কোন কিছু উঠাইতে কষ্ট। কথনও কম্প কখনও পক্ষাঘাত। এক অঙ্গের কম্প অপর অঙ্গে
পক্ষাঘাত।কম্পের পরে অথবা মানসিক আবেগের পরে ,অত্যধিক স্ত্রীসঙ্গম বা সিসক বিষজনিত পক্ষাঘাত হলে
ষ্ট্যানাম মেট উপযোগী ঔষধ।
৪২)সালফারঃ কোন চর্ম রোগ বসিয়া, ডিপথেরিয়া, টাইফয়েড জ্বর, ঠান্ডা লাগার কারণে পক্ষাঘাত হলে সালফার উপযোগী।হাত পায়ের
পক্ষাঘাত সহ মুত্র অবোরোধ ও নাভি
পর্যন্ত অসার। মেরুদন্ডে চাপ দিলে বেদনা বোধ। মেরুদন্ডের দুর্বলতার জন্য রোগী কুজো
হয়ে চলে।বেলা এগারোটার দিকে পাকস্হলীর শুন্যতা বোধ যে রোগীর মাঝে বিদ্যমান তার
জন্য সালফার উপযোগী ঔষধ।
৪৩)ভেরেট্রম এল্বমঃ
কলেরার পরে পক্ষাঘাতহাত ও পায়ের বেদনাসহ পক্ষাঘাত। হাত কাঁপার কারণে কোন কিছুই ধরিতে পারে না।হাত ও পা বরফের মত
শীতল ও নিলাভ। এই লক্ষণ সমষ্টি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তার জন্য ভেরেট্রাম এল্বম
উপযোগী।
৪৪)জিঙ্কাম মেটঃ মস্তিষ্কের কোমলতার কারণে অথবা পায়ের ঘাম বন্ধ হয়ে
পক্ষাঘাত। রোগীর মাথা ঘোরা ও আক্রান্ত অঙ্গের কম্প, অসারতা, ঝিনঝিনানি।
গায়ে ঘর্ষণ করিলে উপশম, মদ্যপানে
বৃদ্ধি, রতিশক্তির হ্রাস; মেরু মন্ডলে জ্বালা সহ রোগীর গায়ে পিপিলিকা হাটার অনুভুতি
হলে সেই রোগীর জন্য জিঙ্কাম মেট উপযোগী।